প্রকাশিত: ২৪/০৯/২০১৭ ৭:০৭ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:০৮ পিএম

তোফায়েল আহমদ, উখিয়ার কুতুপালং থেকে ::
কক্সবাজারের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ জামে মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় লম্বাঘোনা গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা মঞ্জুর আলম তাঁর গায়ের পাঞ্জাবির ছেঁড়া পকেটটা দেখিয়ে বললেন, ‘চার দিন আগে ত্রাণ দেওয়ার সময় রোহিঙ্গারা হামলে পড়েছিল। টানাটানিতে পাঞ্জাবির পকেট ছিঁড়ে গেছে।


তবে গতকাল শনিবার বিকেলে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের উখিয়া ডিগ্রি কলেজের গেটে সেনা সদস্যদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ততার দৃশ্য দেখিয়ে মাওলানা মঞ্জুরই বললেন, ‘এবার পরিস্থিতির উন্নতি হবে। মহাসড়কে আর ত্রাণ বিতরণের সেই দৃশ্য দেখতে হবে না। ’

এমন সময়ই নারায়ণগঞ্জের খানপুরের আঞ্জুমানে তাহফুজ ই ইসলাম নামের একটি সংগঠনের কর্মীরা এসে পৌঁছান কলেজ গেটে। সেখানেই সেনা সদস্যরা নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ত্রাণবাহী বাসটি থামিয়ে দেন। সংগঠনের কর্মীরা ত্রাণগ্রহণকারীদের কাছে নিজেদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করেন। এরপর সেনা সদস্যদের অনুরোধে নিজেরাই প্যাকেটজাত খাবার গাড়ি থেকে নামিয়ে সেনা সদস্যদের নির্ধারিত স্থানে রাখেন।

নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সংগঠন আঞ্জুমানে তাহফুজ ই ইসলামের পরিচালক ইকবাল হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, দিন কয়েক আগে তাঁদের এলাকার আরো একটি বেসরকারি সংগঠনের কর্মীরা রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য-সামগ্রী নিয়ে এসেছিলেন। তাঁরা নিজেরাই সড়কের ওপর সেই ত্রাণ বিলি করেন। তখন ওই সংগঠনের বেশ কয়েকজন কর্মী ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন।

এ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নিয়ে এক গুরুদায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছে।
ইকবাল হোসেন জানান, আঞ্জুমানে তাহফুজ ই ইসলামের পক্ষ থেকে ৬০০ রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য নানা ধরনের খাবারের প্যাকেট আনা হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মো. আবদুর রহমান গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, সেনা সদস্যরা গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছেন। এর আগে শুক্রবার রাতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। তাতে সিদ্ধান্ত হয় যে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমেই সেনা সদস্যরা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতামূলক কাজ করবেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা ত্রাণ বিতরণ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের জন্য বাসস্থান (শেড) নির্মাণের কাজ করবেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জানান, তবে সেনা সদস্যরা আগে ত্রাণ বিতরণের কাজটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। কেননা আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা যেভাবেই হোক উখিয়া ও টেকনাফের বনভূমিতে ছোটখাটো করে হলেও একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে। তাদের এখন দরকার বেঁচে থাকার জন্য খাবার।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিদিনই রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহযোগিতা আসছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, দৈনিক গড়ে শতাধিক ত্রাণবোঝাই যানবাহন এসে পৌঁছাচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে। সেনা সদস্যরা এসব ত্রাণ টোকেনের মাধ্যমে বিতরণ করলে আর কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টেকনাফ মহাসড়কের কুতুপালং থেকে থাইনখালী পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকা একপ্রকার ফাঁকা। অথচ শুক্রবার পর্যন্ত মহাসড়কে ছিল যানবাহনের জট। আবার ত্রাণবোঝাই যানবাহন থেকে ত্রাণের প্যাকেট ছুড়ে মারার কারণে পুরো সড়কে বিশৃঙ্খলা লেগেই ছিল। সড়কের দুই ধারে ত্রাণের অপেক্ষায় ছিল হাজার হাজার রোহিঙ্গা।

এদিকে সেনাবাহিনী সদস্যরা গতকাল থেকে মহাসড়কের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে নামায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে যারা ত্রাণ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আসছে, সেগুলো গতকাল থেকেই সেনা সদস্যরা নির্ধারিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে নিয়ে বিতরণ করছে।

বিতরণ কেন্দ্রে লাইন ধরে ত্রাণ দেওয়ার কারণে কোনো বাড়তি ঝামেলাও পোহাতে হচ্ছে না। এতে রোহিঙ্গারাও বেশ খুশি। বেশি খুশি বৃদ্ধ ও নারী রোহিঙ্গারা। মহাসড়কে যানবাহন থেকে নিক্ষেপ করা ত্রাণসামগ্রী নিতে গিয়ে তারা বরাবরই বঞ্চিত হচ্ছিল। সুত্র: কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ, পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকেও উত্তীর্ণ!

কক্সবাজারে স্বাস্থ্য সহকারীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষাকে ঘিরে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা ...

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যশোরে ৮.৮ ডিগ্রি, টেকনাফে সর্বোচ্চ ৩১

শীতের তীব্রতা বাড়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে দেশের ...

১৩ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি, ইউপি উদ্যোক্তার স্বামী কারাগারে

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ভুয়া সিল–স্বাক্ষর ব্যবহার করে ১৩ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্মনিবন্ধন তৈরির ...